খোদ মার্কিন মুলুকে সমাজতন্ত্রের পতাকাকে সগর্বে তুলে ধরে নিউয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচনে প্রাইমারিতে ডেমোক্রাট দলের হয়ে প্রার্থীপদ জিতে নিলেন “গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী”(হ্যা অবাক হবেন না,মার্কিন মুলুক হলেও,আমি শব্দটা ঠিকই লিখেছি)প্রার্থী জোহরান মামদানি। খেটে খাওয়া মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে এই অকুতোভয় ছেলেটি বহুদিন ধরেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে। এই ছেলেটি সরাসরি বলতে দ্বিধা করেনি যে নিউয়র্ক শহরে ২৫% শিশু খালি পেটে শুতে যায়,প্রচুর মানুষ সৎ পথে থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও বাসস্থান,খাবার, মাথার ওপরে একটা ছাদ জোটাতে পারে না,আমি তাদের সাথে ছিলাম,আছি এবং থাকবো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপন্থী এবং প্রতিষ্ঠানপন্থী রাজনীতির সামনে রীতিমতো বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তায় নেমে রাজনীতি এবং সংগঠন করেছে এই জোহরান মামদানি। ছেলেটির নিজের এবং পারিবারিক জীবনটাও অত্যন্ত বর্ণময়, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে কাজ করেছে নিউয়র্ক শহরের বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাথে যাদের বাড়ি থেকে উঠে যাবার নোটিশ জারি করা হয়েছে,কাজ করেছে গৃহহীন অপুষ্টিতে ভোগা ক্ষুদার্থ মানুষদের সাথে,গলা ফাটিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসনের শিকারে গৃহহীন হয়ে যাওয়া মানুষদের হয়ে। নিজে Rap গায়ক ছিলো, ইয়ং কারডামওম বলে একটা Rap গ্রুপ এ। নিজের ঠাকুমার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা গান লিখে সুর দিয়ে compose করেছে, গানটির নাম “নানী” (ঠাকুমা)।তুখোড় হিন্দি বলতে পারে, অল্প অল্প বাংলাও বলতে পারে। নিচে কমেন্ট বক্সে একটা লিংক দিলাম, নিউয়র্ক শহরে রাস্তায় হিন্দিতে নির্বাচনী প্রচারের বক্তৃতা দেবার এবার আসি জোহরানের মা বাবার কথায়,মা প্রথিতযশা চলচিত্র পরিচালক “মীরা নায়ার” এবং বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মীরা নায়ার বেশ ভালো বাংলা বলতে পারেন তার সাক্ষী আমি নিজেই। আশির দশকের মাঝামাঝি আমি বাদলদার (নাট্যকার বাদল সরকার) প্রথম স্ট্রিট থিয়েটার গ্রুপ এ যাতায়ত করতাম,কলকাতার কার্জন পার্ক এ তখন আমাদের প্র্যাক্টিস হতো,রাস্তাটাই ছিলো নাট্যমঞ্চ।শান্তিনিকেতনের ওয়ার্কশপ থেকে বাদলদার সাথে প্রথম যোগাযোগ, শান্তিনিকেতনের বন্ধুদের হয়তো মনে থাকতে পারে। তখন মীরা নায়ার নাট্যগবেষণার কাজে আমাদের কার্জন পার্কের স্ট্রিট থিয়েটার এ কয়েকদিন এসেছিলেন,স্পষ্ট মনে আছে পরিষ্কার বাংলায় কথা বলতেন। এই মায়ের ছেলে জোহরান যে বাংলায় কথা বলতে জানে তাতে আশ্চর্য হই নি।জোহরানের রাজনৈতিক উত্থান আরো উজ্জ্বল হোক,মার্কিন মুলুকের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আরো অনেক বেশি সমর্থন পাক, অতিদক্ষিণপন্থীদের দিকে প্রবল শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিক।
তাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার রেখে গেলাম” শ্রমিক তোমার কৃষক তোমার দেশটা তোমার দেশটা আমার এই দেশেরই সব জমি হোক যৌথ খামার ” বর্সানজিৎ মজুমদার