মানুষ যুগে যগে ধরে বে’চে থাকবার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। বে’চে থাকার প্রয়াস মানুষের প্রবৃত্তিগত ধর্ম’। বে’চে থাকার জন্য প্রয়োজন গুয়া নিবৃত্তি। পেটের ক্ষুধা নিবৃত্তি হলেই কি মানুষ বেড়ে থাকতে পারবে? অন্য কোন কিছুর প্রয়োজন নেই? অবশ্যই আছে। প্রয়োজন মানসিক ক্ষধা নিবৃত্তি। আর মানসিক ক্ষ,বা নিবৃত্তির জন্যই দরকার শিল্প সংস্কৃতির চর্চা। এই শিল্প সংস্কৃতির বিষয়টিও বিতকির্তা এ নিয়ে যথে যুগে বিতর্ক জাল তৈরি হয়েছে। আজও চলেছে এই বিতর্ক। শিরূপ সংস্কৃতির মানদণ্ড কি তার সঠিক উত্তর অবশ্যই আছে। আপনারা শিল্পের জন্য শিল্প বা কলা-কৈবল্যবাদ, সমাজের জন্য শিল্প, সংস্কৃতি, অপসংস্কৃতি এসব কথা অবশ্যই শুনেছেন। মানুষ যখন শিংগ চর্চা করে চলেছেন তখন অবশ্যই শিল্প সংস্কৃতির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সঠিক পথ নির্দেশ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ কামা। তবে সবকিছুর উৎস এই মানব সমাজ। এই মানব সমাজের অগ্রগতির চিন্তাকে বাদ দিয়ে কোন শিল্প সংস্কৃতি কালজয়ী হতে পারে না। জীবন বিমুখ, সমাজ বিমুখ শিল্প সংস্কৃতি ইতিহাসের ঘুশবির্তে হারিয়ে যাবে। তাই ইতিহাসের বর্ণোবর্তে হারিয়ে বাওয়া সংস্কৃতি আর ময়ূভূমির মরীচিকার পেছনে
দৌড়নো সমার্থক। শিল্প সংস্কৃতি সমাজ ইতিহাসের গতি শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস। তাই সমাজইতি হাসের গতিকে বুঝতে হলে প্রয়োজন সমাজের ভিত্তি ও উপরিসৌধ (Base and superstructure) ধারণ। দেবার চেস্টা করা হল। সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ। এই প্রবন্ধে এ সগর্কে।
শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের কয়েকটি কথা মনে রাখতে হবে। শিল্প সৃষ্টির উৎস শিল্পীর নিছক ব্যক্তিগত থোলেখুশী বা কোন রহস্যময় প্রেরণা নয়। বাস্তব জগত বা সামাজিক পরিবেশ শিঃপীমানসে যেভাবে পরিচালিত হয় তাকেই তিনি নিজের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। কোন শিল্পীই তাঁর সামাজিক ও নিজস্ব শ্রেণী পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে পারেন না। সমাজে পুরাতন ও নতুনের, প্রতিক্রিয়া ও প্রগতির বন্দে, কোন শিল্পীই একেবারে নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না। অসীম বৈচিত্রা পূর্ণ বিশ্ব ও জীবনপ্রবাহ মানুষের মনে প্রতি ফলিত হয়ে ভাব, রস ও কল্পনার জন্ম দেয়। বংপনার জন্ম হয় জীবন, সংগ্রামের প্রয়োজনের তাগিদে। শিল্প হল বন্ধুর সত্তাকে সৃষ্টিমূলক ভাবে জানার প্রनिया (Art is the creative cognition of reality) রবীন্দ্রনাথের মতে, “বাহিরের জগৎ আমাদের
/ মনের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আর একটা জগৎ হইয়া উঠিতেছে। তাহাতে যে কেবল বাহিরের জগতের বস্তু আকৃতি, খুনি প্রভৃতি আছে তাহা নহে। তাহার সঙ্গে আমাদের ভালোলাগা, মন্দ লাগা, আমাদের ভয়, বিস্ময়, আমাদের সুখ দরেৎ জড়িত তাহা আমাদের হৃদয় বৃত্তির বিচিত রসে জারিয়া তুলিয়া আমরা বাহিরের জগতকে বিশেষ রূপে আপনার করিয়া লই।”
রবীন্দ্রনাথের এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই শিংপ সাহিত্যের প্রকৃত দিক নিদে’শ পাওয়া যায়। “শিল্প জনগণের জিনিস। তাঁর শিকড়গুলি যেন শ্রমজীবী জনগণের জীবনের গভীরে প্রোথিত হয়। জনগণ যেন তাকে বোঝে ও ভালোবাসে। তাঁর কর্তব্য জনগণের অনুভতি-চিন্তা ও ইচ্ছাকে ঐক্যবন্ধ এবং উন্নীত করা।” ক্লারা জেটকিন
সমাজ বিকাশের নিয়মগুলি মানুষের সামগ্রিক ক্রিয়া-কলাপেরই ফলশ্রুতি। উৎপাদিকা শক্তি ও উৎ পাদন সংম্পর্কের অবিরাম, স্বন্দেরে গতিশীলতার মধ্য দিয়েই নতুন সমাজের ভিত্তি (Base) প্রস্তুত হয়। এই অর্থনৈতিক ভিত্তি থেকেই গড়ে ওঠে সমাজ জীবনের বিভিন্ন উপাদান সংবিধান, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিভিন্ন রাজনৈতিক আদশ’, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আইন, ধর্মীয় চিন্তা এবং বিভিন্ন ধারণা। এই উপাদানগুলিই হল উপারসৌধ (Super structure)। এ প্রসঙ্গে সমাজ ব্যবস্থার অগ্রগতির স্তরগুলি অবশ্যই আলোচনা করা দরকার। উৎপাদিকা শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্ক যখন পরস্পরের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় তখনই পুরোনো সমাজ ভেদে নতুন সমাজ জন্মলাভ করে। সমাজের এই পরিবর্তনের জন্য কোন মহাপুরুষের দরকার হয় না
বা কোন মহাপুষে তা আটকেও রাখতে পারেন না। একটি পুরোনো, সমাজ ভেঙ্গে কিভাবে নতুন সমাজ
গঠিত হয় তা সমাজ বিকাশের ধারা অনুযায়ী পরপর দেওয়া হ’ল।
আদিম যৌথ সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা শ্রেণীহীন (আদিম)।
২। দাসভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা, দাসমালিক
৩। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, জমিদার (সামন্ত প্রভু)+কৃষক।
৪। পূজিবাদী সমাজব্যবস্থা, ব,জোয়া (আধুনিক শিল্পপতি) সর্বহারা শ্রমিক শ্রেণী।
৫। সমাজতান্ত্রিক সমাজবারস্থ্য সামথ অনুযায়ী কাজ, কাজের গণোগুণ অসোরে মজরেী
৬। সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা, শ্রেণীহীন, শোষণহীন, রাষ্ট্রহীন।
মনে রাখা প্রয়োজন, প্রথনটির থেকে পিতীয়টি
অধিকতর উন্নয়ত সমাজ। এভাবে সমাজের প্রগতি সাম্যবাদী ব্যবস্থায় গিয়ে চূড়ান্তরূপে ধারণ করে। সাম্যবাদী সমাজই শ্রেণীহীন, শোষণহীন, রাগাহীন, মানব সমাজের সর্ব’শ্রে’র সমাজব্যবস্থা। সর্বকালের কোন মনীষীই এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারেন না। যিনি চেষ্টা করেন সমাজের প্রতিক্রিয়ার ও প্রগতির বন্দে, এবং পুরোনো ও নতুনের বন্দ্যে তিনিই পাতি-ক্রিয়াশীল পর্গোত বিরোধী পুরোনো পন্থী। রবীন্দ্রনাথ তাই এই পখেতি বিরোধী, পতিক্রিয়াশীলের উদ্দেশ্যে বলেছেন- “আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা। রবীন্দ্র-নাথের চোখে পরতিবাদী হল নধীন”সবুজরা। পুরোনো পন্থী পতিক্রিয়াশীলরাই মানবতা-বিরোধী কাজকর্ম’ করে থাকেন, তিনি যত বড় পন্ডিঃই হোন না কেন। এটাই সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
সাধারণ ভাবে বলা যায়, উপরিসৌধ অর্থনৈতিক ভিত্তির ধারা নিধারিত হয়। প্রথম স্তরে উৎপাদিকা শক্তি, উৎপাদন সম্পর্ককে নিদিষ্ট করে দেয়। দ্বিতীয় স্তরে উৎপাদন সম্পর্ক (অর্থনৈতিক ভিত্তি) উপরিসৌধের চরিতকে প্রতিষ্ঠিত করে। উৎপাদিকা শক্তির সঙ্গে উপরিসৌধের সপর্ক পরোক্ষ। কিন্তু উৎপাদন।
(Productive
উৎপাদন সম্পর্ক
force)(Relation of Production)
উপরিকাঠামো ও উৎপাদিকা শক্তির মধ্যে সংযোগের সেতু হল উৎপাদন সম্পর্ক। এই সূত্রের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি উৎপাদন সম্পর্কের পরিবর্ত’ন শ্রেণী সম্পর্ক সৃষ্টি করে। উৎপাদন সম্পর্কের পরিবর্ত’ন উপরিসৌধতে পরিবর্তন সূচিত করে। আর এ জন্যই উপরিসৌধ রাষ্ট্রব্যবস্থা, মতাদশ’, ধর্ম’, আইন, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, সংস্কৃতি শ্রেণী সম্পর্কের প্রতিফলন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় পুজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রম ও পাজির বন্দের সম্পর্ক পাজিবাদী সমাজের সাহিত্যে, শিল্পে, সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হয়। মার্কস-এঙ্গেলস্ “On Art and Literature” গ্রন্থে লিখেছেন: “The ideas of the ruling class are in every epoch the ruling ideas.” আমাদের দেশে শিল্প-সংস্কৃতি মূলতঃ শাসক শ্রেণীগুলির সংস্কৃতি: এক কথায় আধ্য-সামন্ততান্ত্রিক ধনতান্ত্রিক সংস্কৃতি। অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, জাতপাত, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবাদ, গণেশের দুধ খাওয়া সামন্ড ভান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রসূত চিন্তা। পাশাপাশি রয়েছে বৃজোয়া সংস্কৃতি যৌনতা, অপসংস্কৃতি, বেলাল্লাপনা
সম্পর্ক উপরিসৌদের সঙ্গে সরাসরি সথাকত। তাই সমাজব্যবস্থায় উৎপাদন সম্পর্ক সৃষ্টি করে যে অর্থ নৈতিক ভিত্তি, উপরিসৌধকে ব্যাখ্যা করার সেটিই হল মূলে সর।
উপরিসৌধ
(Super-Structure) রাষ্ট্রব্যবস্থা, মতাদশ’, ধম’, আইন, সাহিতজ্ঞ, শিল্প, রাজনীতি, সংস্কৃতি
প্রভৃতি। বিপরীতে রয়েছে জনগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। জনগণতান্ত্রিক সংস্কৃতিই হবে আমাদের দেশের প্রকৃত সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকেই আমাদের গড়ে তুলতে হবে সারা ভারতবর্ষে’। গড়ে তুলতে হবে জনগণ-
তাই দেখা যাচ্ছে একই ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পূজিবাদের সমর্থনে যেমন মতামত গড়ে ওঠে, তেমান আবার সৃষ্টি হয় পুজিবাদ বিরোধী ভাবনা ফিতা। পূজিবাদের পরস্পর বিরোধী স্বান্দিকে চরিত্রে। এমন ভাবে প্রতিফলন ঘটেছে ওয়ার্ডসওয়ার্থের রচনায়, যিনি প্রথম পর্বে ফর শীবিলবকে স্বাগত জানিয়েও দ্বিতীর পর্যায়ে তার বিরোধীতা করেন। এর পেছনে বস্তুবাদী ব্যাখ্যা হল- ফরাসী কিলবকে তার সামন্ত তন্ত্র বিরোধী চরিত্রের জন্য একাধিক চিত্রাবিদ শ্বাগত জানালেও তার কৃত্রবর্ধমান সংগ্রানী চগ্রিটি পরবর্তী কালে অনেকের কাছেই আতনেহর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাখতে হবে, উৎপাদিকা শক্তি যেহেতু উপরিসৌধের চরিত্রকে সরাসরি নির্ধারণ করে সেহেতু উৎপাদিকা শক্তির পরিবর্ত’নের ফলে উপরিসৌধের ক্ষেত্রে সবান,পাতিক
উনতিশ
পরিবর্তন সূচিত হয় না। এর কারণ উৎপাদিকা শক্তির চরিত্র শ্রেণী নিরপেক্ষ। উৎপাদিকা শত্তির বিতর্ক। প্রত্যক্ষ ভাবে প্রযুক্তি বিদ্যার সঙ্গে জড়িত।
অর্থনৈতিক ভিত্তি বা কাঠামো মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। উৎপাদিকা শান্তর বিকাশ মানুষের সামাজিক অগ্রগতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ঘটে। উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ পুরনো উৎপাদন সম্পর্কের সে সাধন ও নতুন উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে।
প্রত্যেক সমাজে উপরিসৌধ তার সংশ্লিষ্ট অর্থ’ নৈতিক ভিত্তি খারা নিদিষ্ট হয়। তাই যতদিন পরনো ভিত্তিটি অপরিবর্তিত থাকে ততদিন উপরিকাঠামোতেও কোন পরিবর্ত’ন সাচিত হয় না। সমাজের পুরনো
অর্থনৈতিক কাঠামোটি ভেঙ্গে গিয়ে নতুন ভিত্তি গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় নতুন উপরিকাঠামোর বিকাশ শুরু হয়। এ জন্যই সামন্ততান্ত্রিক সম্যাজ সর্বজনীন ভোটাধিকার বা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অভিজাততান্ত্রিক সংস্কৃতির উপস্থিতি সম্ভব নয়।
ভিত্তি ও উপরিসৌধের পারম্পরিক আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার হয় যে, উপরিকাঠামোয় বিভিন্ন উপাদান আকস্মিক ভাবে সৃষ্টি হয় না বা কোন মহাপুরুষের ইচ্ছায় সৃষ্টি হয় না বা কোন অলৌকিক কারণেও তৈরি হয় না। অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে শ্রেণী সম্পর্ক। শ্রেণী-সম্পর্ক তৈরি করে উপরি-সৌধকে। ভিত্তি ও উপরিসৌধ শ্রেণীগতভাবে সম্পর্কে ও কার্যকর সূত্রে বাঁধা।